বাংলাদেশের ব্রয়লার মুরগি: স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর?

বর্তমানে বাংলাদেশে ব্রয়লার মুরগির মাংস অত্যন্ত জনপ্রিয়। কম সময়ে ও কম খরচে উৎপাদিত হওয়ার কারণে এটি সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যের একটি প্রোটিন উৎস। তবে অনেক গবেষণা ও পুষ্টিবিদদের মতে, ব্রয়লার মুরগি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। আসুন গবেষণা ও তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এটি বিশ্লেষণ করি।
ব্রয়লার মুরগির দ্রুত বৃদ্ধির কারণ
প্রাকৃতিকভাবে একটি দেশি মুরগির বড় হতে ৫-৬ মাস সময় লাগে, অথচ ব্রয়লার মুরগি মাত্র ৩০-৪৫ দিনে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হয়ে যায়। এর মূল কারণ হলো—
- এন্টিবায়োটিক ও হরমোন ব্যবহার: ব্রয়লার মুরগির দ্রুত বৃদ্ধির জন্য খাবারের সাথে এন্টিবায়োটিক ও হরমোন মেশানো হয়, যা মানবদেহে প্রবেশ করলে দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ হতে পারে।
- জেনেটিক্যালি মডিফায়েড খাদ্য: অধিকাংশ খামারে ব্রয়লার মুরগিকে জিএমও (Genetically Modified Organism) খাদ্য খাওয়ানো হয়, যা স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গবেষণায় প্রাপ্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (AMA) এর গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ব্রয়লার মুরগি খাওয়ার ফলে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো হতে পারে:
১. এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স
ব্রয়লার মুরগির খাদ্যে প্রচুর এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে। এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং সাধারণ সংক্রমণও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
২. হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ
২০১৯ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির চর্বি এবং হরমোনযুক্ত খাদ্য মানবদেহে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা বাড়ায়, যা উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
৩. ক্যান্সারের ঝুঁকি
২০১৭ সালে জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল টক্সিকোলজি-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে ব্রয়লার মুরগির খাদ্যে উপস্থিত কৃত্রিম স্টেরয়েড ও রাসায়নিক উপাদান মানুষের দেহে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
৪. হরমোনাল ইমব্যালেন্স ও বন্ধ্যাত্ব
ব্রয়লার মুরগিতে ব্যবহৃত গ্রোথ হরমোন মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নারীদের মধ্যে পিসিওএস (PCOS) এবং পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে, যা বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশের ব্রয়লার মুরগির বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশের ব্রয়লার খামারগুলোর বেশিরভাগই অনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (BFSA) ২০২১ সালে একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে যে ৭০% খামারে অনুমোদনহীন এন্টিবায়োটিক ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়।
বিকল্প কী হতে পারে?
- দেশি মুরগি এবং দেশীয় হাঁসের মাংস খাওয়া
- অর্গানিক ও অ্যান্টিবায়োটিক-মুক্ত মুরগি খোঁজা
- প্রোটিনের বিকল্প উৎস যেমন—মাছ, ডাল, বাদাম ইত্যাদি গ্রহণ করা